Thursday, September 22, 2016

3 তান্ত্রিক হোমের স্থণ্ডিল

তান্ত্রিক হোমের স্থণ্ডিল
 
হস্তমাত্রং স্থণ্ডিলং বা সংক্ষিপ্তে হোমকর্ম্মণি।
অঙ্গুলোৎসেধসংযুক্তং চতরস্রং সমন্ততঃ।
বালুকাং পাতয়েত্তত্র স্থণ্ডিলস্থানমুত্তমম্‌।
ত্রিকোণমণ্ডলং কৃত্বা মধ্যে বিন্দুসমাহিতম্‌।
ততো ত্রিকোনঞ্চৈব ষট্‌কোণং পরিকীর্ত্তয়েৎ।
তদ্বহিবৃর্ত্তমাকুর্য্যাষ্টদলসমন্বিতম্‌।
চতুর্দ্বারং লিখিত্বা চ বজ্রভূপুরসংযুতম্‌।
স্থণ্ডিলস্য বহির্ভাগে পূর্ব্বাগ্রমুত্তরাগ্রকম্‌।
তিস্রস্‌তিস্রো রেখাঃ কুর্য্যাদ্‌ হোমকার্য্যে যথাবিধি।।
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে হস্তপরিমিত স্থানে বালুকা ব্যাপ্ত করিয়া, কুশদ্বারা উহার মধ্যস্থানে একটা ত্রিকোণমণ্ডল করিয়া, তাহার মধ্যে একটি বিন্দু অঙ্কিত করিবে। পরে ঐ ত্রিকোণমণ্ডলের উপরে আর একটি ত্রিকোনমণ্ডল করিয়া বট্‌কোণাকার মণ্ডল করিবে। তৎপরে উহার বাহিরে একটি গোলাকার বৃত্ত মণ্ডল করিয়া বেড় দিবে। তদনন্তর ঐ বৃত্তের গায়ে অষ্টদল পদ্ম অঙ্কিত করিবে। তৎপরে তাহার বাহিরে দুই দুইটি রেখা অঙ্কিত করতঃ প্রান্তস্থানের চারিদিকে দ্বারচতুষ্টয় করিয়া বজ্রভূপুর অঙ্কিত করিবে এবং স্থণ্ডিলের বহির্ভাগে উত্তরাগ্র ও পূর্ব্বাগ্র তিনটি রেখা অঙ্কিত করিবে।

অগ্নির অঙ্গ



যত্র কাষ্ঠং তত্র শ্রোত্রং যতো ধূমোহত্র নাসিকা।
যত্রাল্পজ্বলনং নেত্রং যতোহঙ্গারস্ততঃ শিরঃ।
যত্রপ্রজ্জ্বলিতা জ্জ্বালা সা জিহবা জাতবেদসঃ।।
অগ্নির যেখানে কাষ্ঠ, সেই স্থানে কর্ণ; যেখানে ধূম, সেই স্থানে নাসিকা যেখানে অল্প অল্প জ্বলিতে থাকে, সেই স্থানে নেত্র; যেখানে অঙ্গার, সেই স্থানে শির এবং যেখানে প্রজ্জ্বলিত অগ্নির শিখা, সেই স্থানে জিহবা।
কর্ণহোমে ভবেদ্ব্যাধির্নেত্রেহন্ধত্বং সমীরিতম্‌।
নাসিকায়াং মনঃপীড়া মস্তকে ধনসংক্ষয়ঃ।
জিহবায়াঞ্চ কৃতে হোমে সর্ব্বসিদ্ধির্ভবেদ্‌ ধ্রুবম্‌।।
অগ্নির কর্ণদেশে হোম করিলে হোমকর্ত্তার ব্যাধি হয়, নেত্রহোমে অন্ধত্ব, নাসিকায় মনঃপীড়া, মস্তকে ধনক্ষয় হয়। জিহবায় হোম করিলে সর্ব্বসিদ্ধি লাভ হইয়া থাকে।

অগ্নির নাম

লৌকিকে পাবকো হ্যগ্নিঃ প্রথমঃ পরিকীর্ত্তিতঃ।
আগ্নেস্তু মারুতো নাম গর্ভাধানে বিধীয়তে।।
পুংসবনে চন্দ্রনামা শুঙ্গকর্ম্মণি শোভনঃ।
সীমন্তে মঙ্গল্যে নাম প্রগল্‌ভো জ্বাদকর্ম্মণি।।
নাম্নি স্যাৎ পার্থিবো হ্যগ্নিঃ প্রাশনে চ শুচিস্তথা।
সত্যনামাথ চূড়ায়াং ব্রতাদেশে সমুদ্ভব।
গোদানে সূর্য্যনামা চ কেশান্তে হ্যগ্নিরুচ্যতে।
বৈশ্বানরো বিসর্গে তু বিবাহে যোজকঃ স্মৃতঃ।
চতুর্থ্যান্তু শিখীনাম ধৃতিরগ্নিস্তথাপরে।
প্রায়শ্চিত্তে বিধুশ্চৈব পাকযজ্ঞে তু সাহসঃ।
লক্ষহোমে চ বহ্নিঃ স্যাৎ কোটিহোমে হুতাশনঃ।
পূর্ণাহুত্যাং মৃড়ো নাম শান্তিকে বরদস্তথা।।
পৌষ্টিকে বলদশ্চৈব ক্রোধেহগ্নিশ্চাভিচারিকে।
বশ্যার্থে শমনো নাম বরদানেহভিদূষকঃ।।
কোষ্ঠে তু জঠরো নাম ক্রব্যাদো মৃতভক্ষণে।
আহূয় চৈব হোতব্যং যত্র যো বিহিতোহনলঃ।। ইতি গৃহ্যপরিশিষ্টম্‌।
প্রায়শ্চিত্তে - প্রায়শ্চিত্তাত্মক ব্যাহ্যতি হোমাদিতে,
 পাকযজ্ঞে - পাকাঙ্গ-হোমবৃষোৎসর্গাদিতে।
কার্য্য বিশেষে অগ্নির পৃথক পৃথক নাম করিয়া পূজা ও হোম করিতে হয়। যে কার্য্যে অগ্নির যে নামকরণ হয়, তাহা গৃহ্যপরিশিষ্টে উক্ত হইয়াছে। যথা -
লৌকিককর্ম্মে অগ্নির নাম পাবক, গর্ভাধানে মারুত, পুংবসনে চন্দ্র, শুঙ্গাকর্মে শোভন, সীমন্তোন্নয়নে মঙ্গল, জাতকর্ম্মে প্রগলভ, নামকরণে পার্থিব, অন্নপ্রাশনে শুচি, চূড়াকরণে সত্য, ব্রতাদেশে সমুদ্ভব, গোদানে সূর্য্য, কেশান্তে অগ্নি, সাগ্নিকর্ত্তব্যকর্মে বৈশ্বানরঃ, বিবাহে যোজক, চতুর্থীহোমে শিখী, ধৃতিহোমে অগ্নি, প্রায়শ্চিত্তহোমেবিধু, পাকযজ্ঞে বহ্নি, কোটিহোমে হুতাশন, পূর্ণাহুতিতে মৃড়, শান্তিকরমমে বরদ, পৌষটিকর্ম্মে বলদ, অভিচারে ক্রোধ, বশ্যকর্ম্মে শমন, বরদানে অভিদূষক, কোষ্ঠে জঠর, মৃতভক্ষণে - অর্থাৎ চিতায় ক্রব্যাদ। যেখানে যে নাম বিহিত হইয়াছে, সে স্থানে অগ্নির সেই নামে আহবান করিয়া পূজা ও হোম করিবে। ভবদেবভট্ট বিরচিত পদ্ধতিতে সমাবর্ত্তনক্রিয়াতে তেজ নামক অগ্নির উল্লেখ আছে।

হোমের অগ্নি



পাষাণভবমগ্নিঞ্চ যদিবারণি সম্ভবম্‌।
শ্রোত্রিয়াণাং গেহজঞ্চ বনস্থং বাখবা হরেৎ।
নিরগ্নিব্রাহ্মণাল্লদ্ধো হ্যর্দ্ধলাভকরো ভবেৎ।
ক্ষভ্রবদ্ধোশ্চতুর্থাংশং ফলং দদ্যাদ্ধুতাশনঃ।।
বৈশ্যাচ্ছুদ্রাচ্চ বিফলং জায়তে হোমকর্ম্মণি।
তস্মাৎ সর্ব্বপ্রযত্নেন বহ্নিমুক্তং সমাহরেৎ।। ইতি গৌতমীয়ে।
পাষাণসম্ভূত, অরণিজাত, অরণ্যস্থিত অথবা ব্রাহ্মণগৃহস্থিত অগ্নি আনয়ন করিয়া তাহাতে হোম করিবে। হোমকার্য্যে সাগ্নিক ব্রাহ্মণের নিকট হইতে অগ্নি গ্রহণ করিবে। নিরগ্নি ব্রাহ্মণের নিকট হইতে অগ্নি গ্রহণ করিলে হোমে অর্দ্ধ ফল হয়। ক্ষত্রিয়ের নিকট অগ্নি গ্রহণ করিয়া তাহাতে হোম করিলে চতুর্থাংশ এবং বৈশ্যের নিকট কিম্বা শূদ্রের নিকট হইতে অগ্নি গ্রহণ করিয়া হোম করিলে সেই হোম নিস্ফল হয়। অতএব সর্ব্বপ্রযত্নে বিধিবিহিত অগ্নি গ্রহণপূর্ব্বক হোম করিবে।
পতিতাগ্নি, শবসন্বন্ধীয় অগ্নি ও দীপ হইতে গৃহীত অগ্নি গ্রহণ করিবে না। কাৎস্যপাত্রে অথবা নূতন শরাবে পবিত্র অগ্নি গ্রহণ করতঃ হোম করিবে।

বেদী, স্থণ্ডিল ও কুণ্ড



বেদী - একহস্ত পরিমিত উচ্চ, সমচতুস্কোণ, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে চারিহস্ত, পূর্ব্ব উত্তর ভাগ কিঞ্চিৎ নিম্ন এবং ঊর্দ্ধদেশে চন্দ্রাতপাদি আচ্ছাদিত গোময়াদিতে পরিলিপ্ত পরিস্কৃত ও পবিত্র স্থানকে বেদী বলে।
স্থণ্ডিল - কেশ তুষারাদিরহিত সম চতুর্হস্তপরিমিত বালুকা-ব্যাপ্ত স্থানকে স্থণ্ডিল বলে।
কুণ্ড - ভূমিতে মেখলাযোনি-আদি বিশিষ্ট মনোহর গর্ত্তের নাম কুণ্ড।
তন্ত্রে আটপ্রকার কুণ্ডের উল্লেখ আছে, যথা - চতুরস্রকুণ্ড, যোনিকুণ্ড, অর্দ্ধচন্দ্রকুণ্ড, ত্রাস্রকুণ্ড, বর্ত্তুলকুণ্ড, ষড়স্রকুণ্ড, পদ্মকুণ্ড, অষ্টাস্রকুণ্ড। চতুরস্রকুণ্ডেই প্রায় সমস্ত কার্য্য সম্পন্ন হয় - দেবপূজার হোমাদিতে এই কুণ্ডই প্রশস্ত। চতুর্দ্দিকে একহস্ত পরিমিত ভূমিতে কুশাপাত করিয়া সমচতুরস্ররূপে খনিত কুণ্ডের নাম চতুরস্রকুণ্ড

পরিমাণজ্ঞান



পরিমাপের কথা উল্লেখ থাকিলে, সে স্থলে যজমানের হস্তাদির মাপ লইয়া হোমকার্য্য করিতে হইবে। পুরোহিতের হাতের মাপ হইলেও চলিতে পারে। দ্বাদশ অঙ্গুলি মাপকে প্রাদেশ প্রমাণ বলে। দক্ষিণহস্ত কনিষ্ঠাঙ্গুলি ভিন্ন মুষ্টিবদ্ধ করিয়া কনুই হইতে কনিষ্ঠাঙ্গুলির অগ্রভাগকে অরত্নি বলে। অঙ্গুলির মাপ উক্ত হইলে অঙ্গুষ্ঠর অধোভাগ দ্বারা মাপিতে হয়। হোমাদিকার্য্যে মাপের আবশ্যক হইলে অগ্রে কুশ মাপিয়া লইয়া সেই কুশার দ্বারা স্থণ্ডিলাদি মাপিতে হয়।

হোমের কাষ্ঠ



আম্রকাষ্ঠ, ক্ষিরিবৃক্ষের কাষ্ঠ, বকুল, চম্পক, নাগকেশর প্রভৃতি পুস্পবৃক্ষের কাষ্ঠে হোম করিবে। ব্রাহ্মণগণ বিল্ববৃক্ষের কাষ্ঠেই হোম করিবেন, ইহাই ব্রাহ্মণগণের পক্ষে প্রশস্ত। কোন কোন তান্ত্রিক ক্রিয়ায় কুলকাষ্ঠ দ্বারা হোম বিহিত হইয়াছে। ভিজা অসার, অম্লরসবিশিষ্ট বা কন্টকপূর্ণ কাষ্ঠাদিতে হোম করিবে না।

হোম বিধি



পৌরাণিক পূজাদিতে পৌরাণিক বিধানে, তান্ত্রিক ক্রিয়া দেবপূজা দিতে তান্ত্রিক বিধানে এবং বিবাহাদি সংস্কার ও ব্রতপ্রতিষ্ঠাকার্য্যে বৈদিক বিধানে হোম করতে হয়।


 


No comments:

Post a Comment